
জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশজুড়ে ভোটের উত্তাপ ততই ছড়াচ্ছে, এ বিষয়ে গভীর একটা ভাবনার কথা তুলে ধরলেন ঢাকা ১৯ এর সাবেক এমপি ডা: সালাউদ্দিন বাবু , নির্বাচনকে ধীরে তিনি বলেন,
নির্বাচনের সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে। অনেকেই মনে করছেন এবারের জাতীয় নির্বাচন হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যে চিত্র দেখছি তাতে এ কথা মিথ্যা তা বলতে পারি না। আওয়ামীলীগ হীন পরিস্থিতিতে এই দুই দলই সবচেয়ে শক্তিধর।
ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন জামায়াত ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে আনঅফিসিয়াল ভাবে। এই প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। জামায়াতের সকল সহযোগী সংগঠন প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইছে।
অন্যদিকে আমাদের সংগঠন বিএনপি তুলনামূলক ভাবে নির্বাচনী প্রচারে এগোচ্ছে অনেকটা ধীরে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোন্দলের খবর পাচ্ছি। আমরা যদি সম্মিলিতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি তবে জামায়াত সুবিধা পাবে। আমরা একতাবদ্ধ থাকলে জামায়াত সুবিধা করতে পারবে না। অতীতের অনেক নির্বাচনে আমরা জামাতকে হারিয়েছি। তাই আমি মনে করি যে, জামায়াতের উত্থানে ভীত না হয়ে আমাদের এখন একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। কোনো শক্তি বিএনপির অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না যদি আমরা একাত্ম থাকি দলের স্বার্থে।
বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য জামায়াত ও ইসলামী দলগুলোর উত্থানকে আমি মনে করি বিপদজনক। এরা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এদের আচরণ মোটে ও বর্তমান সময় উপযোগী নয়। কট্টরপন্থি দেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বাংলাদেশের বিপুল জনগণ ও বিশেষ করে নারী ও শ্রমজীবীরা তাই কট্টরপন্থি পছন্দ করেন না। তবু আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে নির্বাচনের মাঠে ভালো অবস্থানে আছে ইসলামী দলগুলো। এদেরকে ইসলামী দল বলাও এক অর্থে ভুল। ইসলামের সাথে এদের যোগসূত্র নেই। রাজনৈতিক প্রচারে জনগণের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এরা ইসলামের নাম ব্যবহার করে।
নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ায় জামায়াতের যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে সেসব প্রতিষ্ঠান প্রার্থীদের পিছনে বিপুল টাকা খরচ করছে। অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকায় একই চিত্র। জামায়াতের কর্মী বা সাথী পর্যায়ের নেতাদের হাতে এখন অনেক টাকা। সবাই জানেন, বাংলাদেশে নির্বাচন মানে টাকার খেলা। টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার অবশ্যই। ইসলামী দলগুলোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে টাকা বিনিয়োগ করে অন্য দলগুলোর সে সুযোগ নেই। তাই স্বাভাবিকভাবে টাকার দাপটে তারা কিছু মাত্রায় এগিয়ে থাকে।
কিন্তু টাকাই শেষ কথা নয়। কারণ, বাংলাদেশের জনগণ বোকা নয়। তারা রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত এবং টাকার কাছে কখনো বিক্রি হন না। আমাদের জনগণ দেশের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে ভোট দিয়ে থাকেন। তাই আপাতত দৃষ্টিতে জামায়াত এগিয়ে আছে মনে হলেও চূড়ান্ত বিজয় বিএনপির ই হবে।
এ প্রসঙ্গে আমাদের দল বিএনপিকে নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। এখনো আমাদের দলের মধ্যে নেতাকর্মীরা একতাবদ্ধ নয়। প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে কোন্দল আছে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে যথাযথ তদারকির ঘাটতিও রয়েছে। তবে আমি মনে করি, বিএনপির মূল শক্তি আমাদের নেতা তারেক রহমান। তার দেশপ্রেম ও মেধা আমাদের দলকে অনুপ্রাণিত করে সব অবস্থায়। আমাদের নেতা তারেক রহমানের কাছে নির্বাচনী জরিপ আছে। তিনি জানেন কোন আসনে কার, কি অবস্থা। সেভাবেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে আমি মনে করি, এটা যত দ্রুত হবে দলের জন্য তত ভালো হবে। কর্মীরা যদি জানতে পারেন দলের প্রার্থী কে? তাহলে আগাম প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।
এ প্রসঙ্গে একটা বিপদের কথা বলে রাখছি। বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা যদি বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন, তবে সেটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। বিএনপি একটি বড় দল। দেশের তৃণমূল পর্যন্ত এই দলের দৃঢ়ভিত্তি আছে। নেতা, কর্মীর সংখ্যাও অগণিত আমাদের। তাই মনোনয়ন দেওয়ার সময় সকলকে সন্তুষ্ট করা সব আসনে সম্ভব হয়ে উঠবে না। এটি যেন আমরা মাথায় রাখি। বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিএনপির কোনো নেতা স্বতন্ত্র দাঁড়ালে ভোট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে। ফলে আসনটি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগেই তাই নিজেদের মধ্যে বসে সকল বিবাদ মীমাংসা করতে হবে।
আগামী নির্বাচন আমাদের দল শুধু না দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কোন পথে হাঁটবে এটি নির্ধারিত হবে যে দল দেশ পরিচালনা করবে তার ওপর। উদার, মধ্যমপন্থী ও গণতন্ত্রের বিশ্বাসী বিএনপি বরাবরই এদেশের মানুষের প্রিয় দল। কট্টরপন্থী দলগুলোর চেয়ে বিএনপির ভোটের সংখ্যা অনেক বেশি। আমি মনে করি, আমাদের দল যদি আমরা ঠিকভাবে নির্বাচনের আগে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত করতে পারি তবে নির্বাচনের জয় পাওয়া কঠিন হবে না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জননেতা তারেক রহমানের উপর এদেশের মানুষ নির্ভর করে। তবে সবার আগে দরকার নিজেদের একতা। এই একতাবদ্ধ থাকার উপরে নির্ভর করছে অনেক কিছু। ঐক্যের শক্তিতে বিশ্বাসী সংগঠনকে হারানো কঠিন।
সময় থাকতেই আমাদের দল বিএনপিকে এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে,বলে আমি তাই মনে করি।